এক বছরে ২০০ আদিবাসী পরিবার ভারতে

মানবাধিকার প্রতিবেদন-২০১৩



পাহাড় ও সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে আশঙ্কাজনকভাবে। নির্যাতনের শিকার হয়ে গত বছরে উত্তরবঙ্গের আদিবাসীদের অন্তত ২০০টি পরিবার প্রতিবেশী দেশ ভারতে চলে গেছে। এ সময়ের মধ্যে সারা দেশে আদিবাসীদের কমপক্ষে ৩৪৬টি পরিবারে লুটপাট হয়েছে; ১১ জন আদিবাসী খুন, ২৬ পরিবারকে ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ এবং ১৫ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে।
বাংলাদেশের আদিবাসীদের মানবাধিকার প্রতিবেদন—২০১৩-তে এসব তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে মানবাধিকার সংস্থা কাপেং ফাউন্ডেশনের এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। কাপেং ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা মঙ্গল কুমার চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মানবাধিকার প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিপাশা চাকমা ও বাবলু চাকমা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি আদিবাসীদের অধিকারসংক্রান্ত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার। এ বিষয়ে দলটির সদিচ্ছার অভাব রয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও অক্সফামের সহায়তায় প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর খুন হওয়া ১১ আদিবাসীর মধ্যে তিনজন পার্বত্য চট্টগ্রামের ও আটজন সমতলের বাসিন্দা ছিলেন। বিভিন্ন হয়রানিমূলক মামলায় গত বছরই পাহাড়ের ৩১ জনসহ মোট ৪২ আদিবাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কমপক্ষে আটটি সহিংস হামলায় সমতলের ৭১ এবং পাহাড়ের ২৭৫ পরিবারসহ মোট ৩৪৬টি পরিবারের ঘরবাড়ি লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়। ‘সেটেলার’ নামে পরিচিত ও অভিবাসিত অ-আদিবাসীদের হামলায় পাহাড়ের ৪০০ পরিবারসহ প্রায় দুই হাজার পরিবার ভারত সীমান্তের ‘নো ম্যানস ল্যান্ডে’ আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে।
এ ছাড়া, ২০১৩ সালেই আদিবাসী-অধ্যুষিত পাহাড়ি এলাকায় প্রায় তিন হাজার ৭৯২ একর এবং সমতলের ১০৩ বিঘা জমি দখল করে নিয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। দখলদারদের মধ্যে সাবেক পরিবেশ ও বনমন্ত্রী হাছান মাহমুদের নামও প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে। এ সময়ে ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ হয়েছে ২৬ আদিবাসী পরিবার।
প্রতিবেদনের তথ্য মতে, গত এক বছরে ৬৭ জন আদিবাসী নারী ও শিশু সহিংসতার শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে ৫৪ জন পাহাড়ি এবং ১৩ জন সমতলের বাসিন্দা। এদের মধ্যে ১২ জন পাহাড়ি নারীসহ মোট ১৫ আদিবাসী নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
এ ছাড়া ৩৪তম বিসিএসে কোটা-ব্যবস্থার জটিলতায় চাকরিতে বঞ্চনার শিকার হয়েছেন ২৮০ আদিবাসী প্রার্থী। সরকারের সদিচ্ছার অভাব ও নীতিনির্ধারকদের উগ্র জাতীয়তাবাদী মানসিকতার কারণে গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও বাস্তবায়িত হয়নি পার্বত্য চুক্তি।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, অপরাধীরা শাস্তি না পেলে নতুন করে অপরাধ করতে উৎসাহিত হয়। শুধু আইন থাকলেই হবে না, অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিয়ে তাদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা দিতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে মঙ্গলকুমার চাকমা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ গত পাঁচ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন কার্যকর করতে পারেনি। অন্যদিকে ২০০৮ সালে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠনের কথা থাকলেও সরকার এ বিষয়ে সামান্য পদক্ষেপও নেয়নি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আশা বিশ্ববিদ্যালয়ের (এএসএ) উপাচার্য ডালেম চন্দ্র বর্মণ, রিসার্চ ডেভেলপমেনট অ্যান্ড কালেকটিভের নির্বাহী পরিচালক মেসবাহ কামাল, আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, ইইউ প্রতিনিধি ফেবরিজিও সিনেসি, অক্সফামের প্রতিনিধি এম বি আখতার ও সৈকত বিশ্বাস।

0 Comment "এক বছরে ২০০ আদিবাসী পরিবার ভারতে"

Post a Comment