খেতাবপ্রাপ্ত একমাত্র আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধা উক্যচিং মারমার মৃত্যু

মুক্তিযুদ্ধে একমাত্র বীর বিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধা উক্যচিং (ইউকেচিং) মারমা আর নেই। গতকাল শুক্রবার সকালে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। গত মঙ্গলবার ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। তিনি স্ত্রী, এক মেয়ে ও দুই ছেলে রেখে গেছেন।
বীর বিক্রমের ছোট ছেলে বাবলু মারমা জানান, গতকাল ভোর থেকে তাঁর বাবার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। চিকিৎসকেরা সকাল সোয়া ছয়টার দিকে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি বহুমূত্রসহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। আগামীকাল রোববার বান্দরবানের কেন্দ্রীয় মহাশ্মশানে তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
চট্টগ্রাম থেকে উক্যচিংয়ের মরদেহ বান্দরবানে নিয়ে আসা হলে শহরে শোকের ছায়া নেমে আসে। শেষবারের মতো তাঁকে একনজর দেখতে আদিবাসী-বাঙালি সবাই তাঁর লাঙ্গিপাড়ার বাসভবনে ছুটে যান।
বেলা তিনটায় লাঙ্গিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে তাঁর মরদেহ জাতীয় পতাকায় শোভিত করে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। এ সময় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা, ৬৯ পদাতিক ব্রিগেডের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নকিব আহমেদ চৌধুরী, জেলা প্রশাসক তারিকুল ইসলাম, পুলিশ সুপার দেবদাশ ভট্টাচার্য্য, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জেলা কমান্ডার আবুল কাশেমসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
উক্যচিং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর) থেকে বিদ্রোহ করে বেরিয়ে এসে ১১ নম্বর সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। যুদ্ধে অসীম সাহসিকতার জন্য তাঁকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করা হয়।
চাকরির নথিপত্র অনুযায়ী উক্যচিংয়ের জন্ম ১৯৩৭ সালে।তবে তাঁর প্রকৃত জন্ম ১৯৩২ সালে বলে মৃত্যুর আগে তিনি প্রথম আলোকে বলেছিলেন। ১৯৫২ সালে তিনি ইপিআরে যোগদান করেন এবং ১৯৮২ সালে অবসর গ্রহণ করেন।
উক্যচিংয়ের স্ত্রী থুইসানু মারমা ও প্রতিবেশী মমতাজ বেগম জানান, ভূমি দখলদার চক্র জাল দলিল সৃষ্টি করে বীর বিক্রমের বসতভিটার একাংশ দখল করে নিয়েছে। প্রতিবাদ করায় তাঁকেসহ পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দখলদার চক্র মামলা করে। এ জন্য স্নায়ুবিক চাপের মধ্যে ছিলেন তিনি।
শোক: উক্যচিংয়ের মৃত্যুতে জাসদের সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাধারণ সম্পাদক শরীফ নূরুল আম্বিয়া গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।


0 Comment "খেতাবপ্রাপ্ত একমাত্র আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধা উক্যচিং মারমার মৃত্যু"

Post a Comment