বাংলাদেশ আদিবাসী অধিকার আইনের খসড়া

সংসদে পাঁচ শতাংশ আসন সংরক্ষণের প্রস্তাব

জাতীয় সংসদে ৫ শতাংশ আসন সংরক্ষণ ও আদিবাসীবিষয়ক একটি জাতীয় কমিশন গঠনের প্রস্তাব রেখে বাংলাদেশ আদিবাসী অধিকার আইনের একটি খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে।
খসড়াটি চূড়ান্ত করার পর সংসদের আগামী অধিবেশনেই এটি বিল আকারে উত্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন আদিবাসীবিষয়ক সংসদীয় ককাসের আহ্বায়ক ফজলে হোসেন বাদশা। গতকাল রোববার সিরডাপ মিলনায়তনে এ-সংক্রান্ত পর্যালোচনা সভায় তিনি এ কথা জানান।
সভায় আইনটির খসড়া উপস্থাপন করেন সংসদীয় ককাসের টেকনোক্র্যাট সদস্য গৌতম কুমার চাকমা। আইনটির প্রাথমিক খসড়ায় ৩০টি ধারা সংযুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া একটি তফসিলে বাংলাদেশে বসবাসরত ৭৯টি আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর নাম তালিকাভুক্ত হয়েছে। এ বিষয়ে সংসদীয় ককাস টেকনিক্যাল কমিটির সমন্বয়কারী মেসবাহ কামাল বলেন, তালিকাটি নিয়ে খোদ টেকনোক্র্যাট কমিটির মধ্যেই মতান্তর থাকায় প্রয়োজনে কোনো নাম সংযোজন কিংবা বিয়োজনের বিধান রেখে খসড়াটি তৈরি করা হয়েছে।
সভায় প্রাবন্ধিক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, আদিবাসীদের বিষয়টি প্রধানত রাজনৈতিক। রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া এর পরিবর্তন সম্ভব নয়। আদিবাসীদের অধিকার রক্ষা, নিরাপত্তা বিধানের জন্য আইনটির প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে তিনি বিষয়টি সংবেদনশীলতার সঙ্গে বিবেচনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
তবে আইনটির নামের সঙ্গে ‘আদিবাসী’ শব্দটি যুক্ত থাকায় এটি সংসদে পাস হওয়ার ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আদিবাসী শব্দটি আমাদের রাষ্ট্র স্বীকার করে না। সারা বিশ্বে যখন আদিবাসী দিবস পালিত হয়, তখন আমাদের দেশে এই দিবস পালনে বাধা দেওয়া হয়। যেখানে আদিবাসী শব্দটির প্রতি রাষ্ট্রের এত অনীহা, সেখানে এই শব্দসমেত আইনটি পাস হবে, তা কল্পনা করাটাও বোকামি হবে।’
মিজানুর রহমানের বক্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেন, ‘সংসদে উত্থাপনের পর বিল পাসের বিষয়টি খুব সহজ হবে না। হয়তো অনেক সময় লেগে যাবে। এ জন্য বাইরের আন্দোলন ও বুদ্ধিবৃত্তিক চাপ অব্যাহত রাখতে হবে।’
ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘আদিবাসী শব্দটি নিয়ে বিতর্ক আছে। কিন্তু আমরা নীতিগত জায়গাটি ছাড়ব না। তাই আদিবাসী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী দুই নামেই বিলটি উত্থাপন করা হবে।’
সভায় আরও বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং। এ ছাড়া বিভিন্ন আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা আইনটির বিভিন্ন ধারা সম্পর্কে মতামত দেন।

0 Comment " বাংলাদেশ আদিবাসী অধিকার আইনের খসড়া "

Post a Comment