সন্ত্রাসী হামলায় পঙ্গু হতে বসেছে ৪ আদিবাসী স্কুলে যেতেও ভয় পায় শিক্ষার্থীরা

সন্ত্রাসী হামলায় পঙ্গু হতে বসেছে ৪ আদিবাসী 
স্কুলে যেতেও ভয় পায় শিক্ষার্থীরা

দুর্বৃত্তদের হামলায় চিরতরে পঙ্গু হতে বসেছেন চার আদিবাসী দিনমজুর। তারা জানেনও না কি কারণে কাজ করা অবস্থায় তাদেরকে অস্ত্রের মুখে মারপিট করতে করতে নিয়ে বট গাছের সাথে ঝুলিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালানো হয়েছে। চারজনের মধ্যে দুইজন এখনও দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিত্সাধীন আর দুইজন অর্থের অভাবে হাসপাতাল থেকে ছাড় নিয়ে বাড়িতে এসে অন্যের ওপর ভর করে সামান্য চলাচল করছেন।

ঘটনাটি ঘটেছে গত ৯ মে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় দিনাজপুরের ফুলবাড়ির পার্শ্ববর্তী নবাবগঞ্জের খালিপপুর শ্রীরামপুর আদিবাসীপাড়ায়। এঘটনায় ৮জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

আহত আদিবাসীরা হলেন খালিপপুর শ্রীরামপুর আদিবাসীপাড়ার বাবলু সরেন, সোম সরেন, বাবুলাল সরেন ও সোনারাম টুডু। এদের মধ্যে বাবুলাল সরেন ও সোনারাম টুডু এখনও দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিত্সাধীন রয়েছেন।

সম্প্রতি সরেজমিনে খালিপপুর শ্রীরামপুর আদিবাসীপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, ঐ গ্রামে শুধুমাত্র আদিবাসীদের বসবাস। সেখানে ৬০ পরিবারের শতাধিক নারী-মানুষ বাস করছেন। গ্রামে ঢুকতেই দেখা যায়, শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সবারই চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ। কেউ কোন কথা বলতে চাইছেন না সন্ত্রাসীদের হামলা আর নির্যাতনের ভয়ে। আতঙ্কের কারণে নারীরা ক্ষেতখামারে কাজে বের হতে পারছেন না, পুরুষরাও গ্রামের বাইরে গেলে দলবদ্ধভাবে যাচ্ছেন। হামলার আশঙ্কায় রাত জেগে পুরুষরা গ্রাম পাহারা দিচ্ছেন। সংবাদকর্মীর পরিচয় পাওয়ার পর সাহস করে এগিয়ে আসেন একে একে গ্রামের সব বয়সের নারী-পুরুষ।

বৃদ্ধ পিতা মঙ্গল সরেনের ঘারে ভর করে কথা বলেন দুর্বৃৃত্তদের হামলায় পঙ্গু হতে চলা বাবলু সরেন। তিনি বলেন, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় তারা চারজন শহীদুল ইসলামের জমির ধান কেটে পাওয়ার টিলারে ওঠানোর সময় আকস্মিকভাবে খালিপপুর কাজিপাড়া গ্রামের মৃত নূর ইসলামের ছেলে মাহাবুর রহমান ও হাফিজুর রহমান, মো. কালাম ও নূর ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, রেজাউল ইসলাম এবং খালিপপুর খড়েরপাড় গ্রামের অতুল মিয়া ও অতুল মিয়ার ছেলে খোরশেদ আলী এসে কোন কিছু বোঝার আগেই বেধড়ক মারপিট শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা তাদেরকে মারতে মারতে খালিপপুর কাজিপাড়ায় নিয়ে হাত বেঁধে বট গাছের সাথে ঝুলিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় এলোপাথারি মারপিট করে। এ সময় তারা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।

বাবলু সরেনের পিতা বলেন, পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারি ছেলেকে পঙ্গু করে দেয়ায় পেটে ঠিক মত ভাত পড়ছে না। অর্থের অভাবে ছেলের চিকিত্সা করতে না পেরে বাড়িতে এনে স্থানীয়ভাবে কবিরাজি চিকিত্সা করতে হচ্ছে।

অপর আহত সোম সরেনের স্ত্রী নিরাতা টুডু বলেন, স্বামীকে পিটিয়ে পঙ্গু করে দেয়ায় আয়-উপার্জন সব বন্ধ হয়ে গেছে। দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে। দুর্বৃত্তদের ভয়ে ক্ষেতে কাজ করতে যেতেও সাহস পাচ্ছেন না। অর্থের অভাবে স্বামীর কোন চিকিত্সা করাতে পারছেন না বলে বাড়িতে বিনা চিকিত্সায় পড়ে রয়েছেন।

খালিপপুর কাজিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী পূর্ণিমা সরেন, শেফালী বাস্কে, রুমিলা টুডু ও সুসান্না হাসদা বলে, বাড়ির লোকজনদের মারপিট করার পর থেকে ভয়ে স্কুলে যেতে সাহস পাচ্ছে না। তবে ভয়ে ভয়ে দল বেঁধে যাচ্ছে কিছু কিছু ছেলেমেয়ে।

নবাবগঞ্জ থানার ওসি আমিরুল ইসলাম বলেন, মামলা দায়েরের পর মামলার এক নম্বর আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। অন্য আসামিদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

উল্লেখ্য, দু'বছর আগে খালিপপুর শ্রীরামপুর আদিবাসীপাড়ার আদিবাসী এক স্কুল ছাত্রীকে স্কুলে যাওয়ার পথে মারপিটকারি মাহাবুর রহমানের আত্মীয় এক যুবক ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। এলাকাবাসী ঐ যুবককে আটক করে পিটিয়ে থানায় দেয়। পরে ঐ ছাত্রীর পরিবারকে চাপের মুখে মামলা আপোষ করতে বাধ্য করে। এরই জের ধরে মাহাবুর রহমানসহ তার লোকজন ঐ ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে আদিবাসীদের অভিযোগ।

Copyright The Daily Ittefaq © 2014

0 Comment "সন্ত্রাসী হামলায় পঙ্গু হতে বসেছে ৪ আদিবাসী স্কুলে যেতেও ভয় পায় শিক্ষার্থীরা"

Post a Comment