শেরপুরের
নালিতাবাড়ী উপজেলার বিস্তীর্ণ পাহাড়ি এলাকাজুড়ে গারো, হাজং ও কোচদের বাস।
ক্রমেই বিলুপ্ত হতে চলেছে শেরপুরের এসব আদিবাসীর অনেক কৃষ্টি-সংস্কৃতি।
৩২৭ দশমিক ৬১ বর্গকিলোমিটার আয়তনবিশিষ্ট নালিতাবাড়ী উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের ৭৪টি গ্রামই গারো, হাজং ও কোচ অধ্যুষিত। সহস্রাধিক গারো, হাজং ও কোচ পরিবারের প্রায় ৪০ হাজার মানুষের এখানে বসবাস।
উপজেলার সীমান্তবর্তী পানিহাটা, তাড়ানি, পেকামাড়ি, মায়াঘাসি, নাকুগাঁও, দাওধারা, আন্ধারুপাড়া, খলচান্দা, বুরুঙ্গা, বাতকুচি, সমেশ্চুড়া, খলিসাকুড়ি, গাছগড়া, নয়াবিল এলাকায় বেশির ভাগ আদিবাসীর বাস।
আদিকাল থেকে এসব এলাকায় বাপ-দাদার বসতভিটায় বাস করে আসছে বলে এরা নিজেদের আদিবাসী বলেই পরিচয় দিয়ে থাকে।
চলমান বিশ্বে সব মানুষের জীবনমান বাড়লেও আদিবাসীদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটেনি। বরং তাদের হাজার বছরের ইতিহাস ঐতিহ্যও এখন হারিয়ে যেতে বসেছে।
গারো, হাজং ও কোচ— এই তিন সম্প্রদায়েরই রয়েছে আলাদা কৃষ্টি-সংস্কৃতি এবং আলাদা সমাজব্যবস্থা।
দেখা যায়, ধর্মীয় বিশ্বাসে গারোরা খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী আর কোচ ও হাজং সম্প্রদায়ের লোকজন সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বী। গারোদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব হলো বড়দিন। এ ছাড়া, প্রতিবছর ইস্টার সানডে, তীর্থ উৎসব, ইংরেজি নববর্ষ ও ওয়ানগালা উৎসব পালন করে থাকে।
গারো আদিবাসী পরিবার পরিচালিত হয় মাতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার অধীনে ।
কোচদের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব হলো দুর্গাপূজা ও কালীপূজা উৎসব। এসব ধর্মীয় উৎসব ছাড়াও এ দুই সম্প্রদায় আরো আলাদা আলাদা সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান পালন করে থাকে।
কালের বিবর্তনে বর্তমান ডিজিটাল যুগে এসে এসব গারো, হাজং ও কোচ আদিবাসীদের হাজার বছরের ঐতিহ্য-সংস্কৃতি অনেকটাই হারিয়ে যাচ্ছে।
এখানের আদিবাসী নেতা প্রদীপ জেংচাম বলেন, ‘বর্তমানে আদিবাসীদের অনেক কৃষ্টি-সংস্কৃতি চোখে পড়ছে না। হারিয়ে গেছে অনেক বাদ্যযন্ত্রও।’
হারিয়ে যাওয়া এসব বাদ্যযন্ত্রের মধ্যে রয়েছে (আদিবাসীদের ভাষায়) মান্দিদামা, ক্রাম, খোল, নাগ্রা, জিপসি, খক, মিল্লাম, স্ফি, রাং, বাঁশের বাশি, আদুরী ইত্যাদি।
আবার এদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক দকবান্দা, দকশাড়ী, খকাশিল, দমী, রিক মাচুল, রাঙ্গা লেফেন ও আছাম এখন আর পরতে দেখা যাচ্ছে না।
অন্যদিকে খাদ্যের তালিকায় থাকা বাঁশের কড়ুুল, চালের গুড়া দিয়ে তৈরি ‘মিয়া’, কলাপাতায় করে ছোট মাছ পুড়ে তৈরি ‘ইথিবা’, মুরগির বাচ্চা পুড়ে বাঁশের চোঙ্গায় ভরে পেঁয়াজ ও কাঁচামরিচ দিয়ে ভর্তা করে তৈরি ব্রেংআ, মিমিল, কাঁকড়া, শামুক ও শূকরের গোশত, চালের তৈরি মদ ‘চু’ আর কোচ আদিবাসীদের বিশেষ খাবার কাঠমুড়ি ইত্যাদি খাওয়া প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে।
খলচান্দা গ্রামের পরিমল কোচ ও মলিন্দ্র কোচ বলেন, ‘আমরা বন-পাহাড়ে যুদ্ধ করে অসহায় জীবন যাপন করে আসছি। তাই পেটের তাগিদে ইতিহাস-ঐতিহ্য বুঝি না, শুধু বুঝি বেঁচে থাকতে হবে।’
নিজস্ব ভাষায় কথা বলার জন্য কোচদের আছে ‘কোচ ভাষা’ আর গারোদের আছে ‘আচিক’ ভাষা। বর্তমানে এই দুই ভাষাতেও বাংলা ভাষার সংমিশ্রণ হয়ে গেছে। নতুন প্রজন্মের অনেকেই তাদের নিজস্ব ভাষার ফাঁকে ফাঁকে বাংলাজুড়ে দিয়ে কথা বলে থাকে।
খলচান্দা কোচপাড়া গ্রামের রমেশ চন্দ্র কোচ জানান, কোচ ভাষায় এখন বাংলা ভাষার মিশ্রণ ঘটে গেছে। এমনকি তিনি নিজেও তাদের নিজস্ব ভাষার সঙ্গে বাংলা ভাষা যোগ করা ছাড়া কথা বলতে পারেন না।
‘আমরা অনেক দুঃখকষ্ট নিয়ে পাহাড়ে জীবনযাপন করি’ কথাটি কোচ ভাষায় জানতে চাইলে তিনি তা বলতে পারেননি। নিজস্ব ভাষা সংরক্ষণে তথা মায়ের ভাষায় কথা বলার জন্য আদিবাসীদের নিজস্ব ভাষায় স্কুল প্রতিষ্ঠার দাবিও জানান খলচান্দা গ্রামের শিক্ষক পরিমল কোচ।
আদিবাসী সংগঠন ট্রাইভাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (টিডব্লিউএ) চেয়ারম্যান লুইস নেংমিনজা আদিবাসীদের কৃষ্টি-সংস্কৃতি সংরক্ষণে নালিতাবাড়ীতে আদিবাসী কালচারাল একাডেমি স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন।আগে প্রকাশিত
৩২৭ দশমিক ৬১ বর্গকিলোমিটার আয়তনবিশিষ্ট নালিতাবাড়ী উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের ৭৪টি গ্রামই গারো, হাজং ও কোচ অধ্যুষিত। সহস্রাধিক গারো, হাজং ও কোচ পরিবারের প্রায় ৪০ হাজার মানুষের এখানে বসবাস।
উপজেলার সীমান্তবর্তী পানিহাটা, তাড়ানি, পেকামাড়ি, মায়াঘাসি, নাকুগাঁও, দাওধারা, আন্ধারুপাড়া, খলচান্দা, বুরুঙ্গা, বাতকুচি, সমেশ্চুড়া, খলিসাকুড়ি, গাছগড়া, নয়াবিল এলাকায় বেশির ভাগ আদিবাসীর বাস।
আদিকাল থেকে এসব এলাকায় বাপ-দাদার বসতভিটায় বাস করে আসছে বলে এরা নিজেদের আদিবাসী বলেই পরিচয় দিয়ে থাকে।
চলমান বিশ্বে সব মানুষের জীবনমান বাড়লেও আদিবাসীদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটেনি। বরং তাদের হাজার বছরের ইতিহাস ঐতিহ্যও এখন হারিয়ে যেতে বসেছে।
গারো, হাজং ও কোচ— এই তিন সম্প্রদায়েরই রয়েছে আলাদা কৃষ্টি-সংস্কৃতি এবং আলাদা সমাজব্যবস্থা।
দেখা যায়, ধর্মীয় বিশ্বাসে গারোরা খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী আর কোচ ও হাজং সম্প্রদায়ের লোকজন সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বী। গারোদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব হলো বড়দিন। এ ছাড়া, প্রতিবছর ইস্টার সানডে, তীর্থ উৎসব, ইংরেজি নববর্ষ ও ওয়ানগালা উৎসব পালন করে থাকে।
গারো আদিবাসী পরিবার পরিচালিত হয় মাতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার অধীনে ।
কোচদের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব হলো দুর্গাপূজা ও কালীপূজা উৎসব। এসব ধর্মীয় উৎসব ছাড়াও এ দুই সম্প্রদায় আরো আলাদা আলাদা সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান পালন করে থাকে।
কালের বিবর্তনে বর্তমান ডিজিটাল যুগে এসে এসব গারো, হাজং ও কোচ আদিবাসীদের হাজার বছরের ঐতিহ্য-সংস্কৃতি অনেকটাই হারিয়ে যাচ্ছে।
এখানের আদিবাসী নেতা প্রদীপ জেংচাম বলেন, ‘বর্তমানে আদিবাসীদের অনেক কৃষ্টি-সংস্কৃতি চোখে পড়ছে না। হারিয়ে গেছে অনেক বাদ্যযন্ত্রও।’
হারিয়ে যাওয়া এসব বাদ্যযন্ত্রের মধ্যে রয়েছে (আদিবাসীদের ভাষায়) মান্দিদামা, ক্রাম, খোল, নাগ্রা, জিপসি, খক, মিল্লাম, স্ফি, রাং, বাঁশের বাশি, আদুরী ইত্যাদি।
আবার এদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক দকবান্দা, দকশাড়ী, খকাশিল, দমী, রিক মাচুল, রাঙ্গা লেফেন ও আছাম এখন আর পরতে দেখা যাচ্ছে না।
অন্যদিকে খাদ্যের তালিকায় থাকা বাঁশের কড়ুুল, চালের গুড়া দিয়ে তৈরি ‘মিয়া’, কলাপাতায় করে ছোট মাছ পুড়ে তৈরি ‘ইথিবা’, মুরগির বাচ্চা পুড়ে বাঁশের চোঙ্গায় ভরে পেঁয়াজ ও কাঁচামরিচ দিয়ে ভর্তা করে তৈরি ব্রেংআ, মিমিল, কাঁকড়া, শামুক ও শূকরের গোশত, চালের তৈরি মদ ‘চু’ আর কোচ আদিবাসীদের বিশেষ খাবার কাঠমুড়ি ইত্যাদি খাওয়া প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে।
খলচান্দা গ্রামের পরিমল কোচ ও মলিন্দ্র কোচ বলেন, ‘আমরা বন-পাহাড়ে যুদ্ধ করে অসহায় জীবন যাপন করে আসছি। তাই পেটের তাগিদে ইতিহাস-ঐতিহ্য বুঝি না, শুধু বুঝি বেঁচে থাকতে হবে।’
নিজস্ব ভাষায় কথা বলার জন্য কোচদের আছে ‘কোচ ভাষা’ আর গারোদের আছে ‘আচিক’ ভাষা। বর্তমানে এই দুই ভাষাতেও বাংলা ভাষার সংমিশ্রণ হয়ে গেছে। নতুন প্রজন্মের অনেকেই তাদের নিজস্ব ভাষার ফাঁকে ফাঁকে বাংলাজুড়ে দিয়ে কথা বলে থাকে।
খলচান্দা কোচপাড়া গ্রামের রমেশ চন্দ্র কোচ জানান, কোচ ভাষায় এখন বাংলা ভাষার মিশ্রণ ঘটে গেছে। এমনকি তিনি নিজেও তাদের নিজস্ব ভাষার সঙ্গে বাংলা ভাষা যোগ করা ছাড়া কথা বলতে পারেন না।
‘আমরা অনেক দুঃখকষ্ট নিয়ে পাহাড়ে জীবনযাপন করি’ কথাটি কোচ ভাষায় জানতে চাইলে তিনি তা বলতে পারেননি। নিজস্ব ভাষা সংরক্ষণে তথা মায়ের ভাষায় কথা বলার জন্য আদিবাসীদের নিজস্ব ভাষায় স্কুল প্রতিষ্ঠার দাবিও জানান খলচান্দা গ্রামের শিক্ষক পরিমল কোচ।
আদিবাসী সংগঠন ট্রাইভাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (টিডব্লিউএ) চেয়ারম্যান লুইস নেংমিনজা আদিবাসীদের কৃষ্টি-সংস্কৃতি সংরক্ষণে নালিতাবাড়ীতে আদিবাসী কালচারাল একাডেমি স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন।আগে প্রকাশিত
0 Comment "বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে শেরপুরের আদিবাসীদের কৃষ্টি-সংস্কৃতি"
Post a Comment