খাদ্যসংকটে এক হাজার আদিবাসী

খাদ্যসংকটে এক হাজার আদিবাসী

আধিপত্য বিস্তার নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের দুটি আঞ্চলিক সংগঠনের দ্বন্দ্বের জের হিসেবে ২১ দিন ধরে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী নাড়াইছড়ির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে৷ এর মধ্যে ৩ মে নাড়াইছড়ি বাজারটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়৷ এর পর থেকে নাড়াইছড়ির ২০টি গ্রামের প্রায় এক হাজার আদিবাসী পরিবার খাদ্যসংকটে পড়েছে৷
নাড়াইছড়ি বাজারটি পুড়িয়ে দেওয়ার পর আট দিন পেরিয়ে গেলেও প্রশাসন সেখানে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছাতে পারেনি৷ প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নিরাপত্তা ও যোগাযোগব্যবস্থার কারণে সেখানে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না৷
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সাল থেকে নাড়াইছড়ি এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস, সন্তু) সঙ্গে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) দ্বন্দ্ব চলে আসছে৷ ওই দুটি সংগঠনের বিরোধকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় একাধিকবার বন্দুকযুদ্ধ ও কয়েকটি হত্যার ঘটনা ঘটেছে ৷ গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ও ৯ মার্চ দুটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে৷ ২০ এপ্রিল থেকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত দুটি সংগঠনের মধ্যে তিন দফা বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে৷ আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ৩ মে নাড়াইছড়ি বাজারটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়৷
নাড়াইছড়ির বাবুছড়ার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, নাড়াইছড়ির ২০টি গ্রামে প্রায় এক হাজার আদিবাসী পরিবার বসবাস করে৷ ২০ এপ্রিল থেকে ওই দুটি সংগঠন নাড়াইছড়িতে নৌযান চলাচল ও রাস্তায় লোকজনের চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে৷ এর পর থেকে নাড়াইছড়ির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়৷ ২০টি গ্রামের মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাবেচার একমাত্র ভরসা নাড়াইছড়ি বাজার৷ ৩ মে বাজারটি পুড়িয়ে দেওয়ায় ২০টি গ্রামের মানুষ খাদ্যসংকটে পড়ে৷ ওই দুটি সংগঠনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় নাড়াইছড়ির লোকজন প্রাণের ভয়ে ২৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বাবুছড়া বাজারে গিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী কিনতে পারছেন না৷
৫ নম্বর বাবুছড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সুগত প্রিয় চাকমা বলেন, নাড়াইছড়ি বাজারটি পুড়ে যাওয়ায় ওই এলাকার বাসিন্দারা খাদ্যসংকটে পড়েছে৷ নিরাপত্তার কারণে পরিবারগুলো বাবুছড়া বাজারেও আসতে পারছে না৷ যোগাযোগব্যবস্থার সমস্যার কারণে সেখানে কোনো ত্রাণসামগ্রীও পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না৷ যোগাযোগব্যবস্থা আর কয়েক দিন বন্ধ থাকলে নাড়াইছড়ির বাসিন্দাদের অনাহারে মরতে হবে৷
ইউপিডিএফের উপজেলা সংগঠক কিশোর চাকমা বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ করা হয়নি৷ জেএসএসের (সন্তু) পক্ষ থেকে নাড়াইছড়ির বাসিন্দাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে৷’
জেএসএসের (সন্তু) কেন্দ্রীয় সহকারী তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমা পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, ‘ইউপিডিএফের লোকজন নাড়াইছড়ির বাজারটি পুড়িয়ে দিয়ে এবং যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ করে আমাদের ওপর দোষ চাপাতে চাইছে৷ জেএসএস নাড়াইছড়ি এলাকায় যোগাযোগ বন্ধে কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি৷’
দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফজলুল জাহিদ বলেন, ‘স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আমাকে জানিয়েছেন, নাড়াইছড়ি এলাকায় খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে৷ সেখানে ত্রাণ ও খাদ্যসামগ্রী পাঠানোর জন্য বিজিবির সঙ্গে যোগাযোগ করছি৷’

0 Comment "খাদ্যসংকটে এক হাজার আদিবাসী"

Post a Comment