আদিবাসী নিপীড়ন রাষ্ট্রের ব্যর্থতা

জাতীয় সেমিনারে বক্তারা
 
‘আদিবাসী’দের ভূমি অধিকার ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত জাতীয় সেমিনারে বক্তারা আদিবাসীদের অধিকার সুরক্ষিত হওয়ার বদলে তাদের ওপরে যে নিপীড়ন চলছে এটা রাষ্ট্রের ব্যর্থতা বলে উল্লেখ করেছেন। তারা বলেন, ভূমির অধিকারই হচ্ছে মানবাধিকার। কিন্তু ভূমির অধিকার হারাচ্ছে আদিবাসীরা, তারা বিচার পাচ্ছে না। এই বিচারহীনতা, জবাব না দেয়ার সংস্কৃতি একদিন রাষ্ট্রকেই আক্রান্ত করবে। রাষ্ট্রীয় কাঠামো ভেঙে পড়বে। একই সঙ্গে রাষ্ট্রে সকল জাতি-গোষ্ঠীর প্রতি সমান আচরণ না করে উগ্র বাঙালিত্বের চর্চা দেখা দিয়েছে। যা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও ছড়িয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে নির্বাচিত সরকারের প্রধান দায়িত্ব সংখ্যাগরিষ্ঠের স্বার্থরক্ষা নয় বরং সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা ও অধিকারের সুরক্ষা প্রদান। কিন্তু রাষ্ট্র সেই সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে বলে আশংকা প্রকাশ করা হয়। তাই সংখ্যালঘু ও আদিবাসী গোষ্ঠীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন জরুরি বলে মত দেয়া হয় এই সেমিনারে। গতকাল বুধবার মোহাম্মদপুরে ওয়াইডাব্লিউসিএ মিলনায়তনে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এ  সেমিনারের আয়োজন করে।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং মূল প্রবন্ধে ৫ দফা সুপারিশমালা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, অবিলম্বে আদিবাসীদের ভোগ-দখলকৃত, প্রথাগত ও ঐতিহ্যগত ভূমি মালিকানার স্বীকৃতি দিয়ে আইন প্রণয়ন , এসব ভূমিতে যে সব ভুয়া ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে যে সব প্রভাবশালীদের লিজ দেয়া হয়েছে দ্রুত সে সব লিজ বাতিল , সমতলে আদিবাসী ভূমি কমিশন গঠন করে আদিবাসীদের ভূমি মালিকানা নিশ্চিতকরণ, পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নসহ ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন ২০০১ সংশোধন ও কার্যকর  এবং আদিবাসী অধিকার আইন প্রণয়ন করতে হবে।

এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান, বিশেষ অতিথি ছিলেন আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের আহ্বায়ক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি। মূল আলোচক ছিলেন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। আলোচনায় অংশ নেন এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, আইএলও’র জাতীয় সমন্বয়ক অ্যালেক্ষাস চিচেম, জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউজিন নকরেক, ইউএনডিপির হোসেন শহীদ সুমন প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন।

অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেছেন, রাষ্ট্র চাইলে আদিবাসীদের ভূমির অধিকার দিতে পারে। রাষ্ট্রের সদিচ্ছা থাকলে আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতেও কোন বাধা নেই। কিন্তু রাষ্ট্র যখন সে অধিকার দিতে চায় না। তখন আদিবাসীরা ভূমিদস্যুদের দ্বারা উত্খাত হয় এবং আইন-শৃংখলা বাহিনী তাদের সহযোগিতা করে না। তিনি বলেন, কিন্তু এর শেষ দেখার সময় এসেছে। প্রত্যেক ব্যক্তির সুরক্ষা রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্র এই সুরক্ষা দিয়ে কাউকে দয়া দেখাচ্ছে না। এই সুরক্ষা নিশ্চিত করে রাষ্ট্রকে প্রমাণ করতে হবে — এটা জনবান্ধব রাষ্ট্র।

সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, দেশে আদিবাসীদের মানবাধিকার পরিস্থিতি নাজুক। বাজেটে আদিবাসীদের জন্য বরাদ্দ অত্যন্ত কম। সেই টাকাও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের নামে খরচ করতে আগ্রহী সরকার। তিনি আদিবাসীদের জীবন-মান বজায় রেখে, সংস্কৃতির ধারা অক্ষুণ্ন রেখে আধুনিক শিক্ষাদানে সরকারি বরাদ্দ বৃদ্ধিও দাবি জানান।

রানা দাশগুপ্ত বলেন, জাতীয় সংসদকেই আদিবাসীদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সে জন্য সংখ্যালঘু ও আদিবাসীদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন জরুরি।

শামসুল হুদা বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে নির্বাচিত সরকারের প্রধান দায়িত্ব সংখ্যাগরিষ্ঠের স্বার্থরক্ষা নয় বরং সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা ও অধিকারের সুরক্ষা প্রধান। কিন্তু রাষ্ট্র সেই সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে।

0 Comment "আদিবাসী নিপীড়ন রাষ্ট্রের ব্যর্থতা"

Post a Comment