তানোরে আদিবাসী নারী হত্যার ৩দিন : গ্রেপ্তার হয়নি ফাদার মাইকেল
তানোরে অশুভ শক্তি তাড়ানোর নাম করে ফুলমনি (৬০) নামের এক ক্ষুদ্র নৃ-
গোষ্ঠী নারীকে পিটিয়ে ও পা দিয়ে খুঁচে হত্যার ঘটনার তিনদিন পার হয়ে গেলেও
গ্রেপ্তার করা হয়নি ওই গীর্জার ফাদার মাইকেল কোড়াইয়াকে।
এ নিয়ে শুক্রবার (২৮ আগস্ট) বিকেল ৩টার দিকে নিহত ফুলমণির মেয়ে আরতী
মার্ডি, তার স্বামী সিলিপ হেমব্রমসহ বেশ কিছু আদিবাসী তানোর থানায় এসে
গীর্জার ফাদার মাইকেল কোড়াইয়াসহ সংশ্লিষ্টদের আটক করার জোর দাবি জানায়।
এ দিকে ফুলমনি হত্যা ঘটনায় ওই গীর্জার ফাদারসহ সংশ্লিষ্টদেরকে গ্রেফতার না করায় তানোর আদিবাসী পরগানা পরিষদসহ এলাকাবাসী ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। অবিলম্বে ফাদার মাইকেলসহ সংশ্লিষ্টকে গ্রেফতার না করা হলে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেয়া হবে বলে জানান তারা।
শুক্রবার সকালে সরজমিনে মুন্ডুমালা পৌর এলাকার চুনিয়াপাড়া গ্রামে নিহত ফুলমনির বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, চোখের সামনে মাকে পিটিয়ে হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে জ্ঞান হারাচ্ছেন আরতী মার্ডি।
আরতী মার্ডি জানান, ‘হামার মাকে ওরা হামার সামুনে খুব মেরেছে। যুখুন মা
পানি খেতে চাইলো তখুন ওরা পানি দিলো কিন্তু মা ইকবার বুমোন করে মারা গেল।
আমি কুতো অনুনয়-বিনুনয় কুরেছি, হামার মাকে হাসপাতালে লিইয়্যা যাবো। কিন্তু
ফাদার হামার একটুও কথা শুনলো না।’
এবিষয়ে তানোর আদিবাসী পরগানা পরিষদের সভাপতি দূরবীণ কিসকু জানান, এটা
অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। আমরা দোষী ব্যক্তিদের সুষ্ঠু বিচার চাই। যেখানে এই
ঘটনা ঘটেছে সেই গীর্জার ফাদারসহ সংশ্লিষ্টদের অতি দ্রুত আইনের আওতায় আনার
দাবি জানান।
এ দিকে ‘সাধুজন মেরী ভিয়ান্নী’ গীর্জায় গিয়ে দেখা গেছে, জনশূন্য হয়ে পড়ে
আছে গীর্জা। অনেক ডাকাডাকির প্রায় ৪৫ মিনিট পর গীর্জার ফাদার মাইকেল
কোড়াইয়া ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে আবার ঘরের মধ্যে ডুকে
যান তিনি। কিছুক্ষণ পর একটা প্রতিবাদ কপি নিয়ে এসে আমাদের সামনে দেন।
হত্যাকান্ড বিষয়ে কোন কিছু বলতে পারবেন না বলে তিনি জানান।
তবে কথার এক ফাঁকে তিনি জানান, সপ্তাহ খানেক থেকে তার গীর্জার স্কুল
শিক্ষক বিলাসীসহ বর্ষা, ফাল্পুনী, সম্পা, রতনসহ ৬ জনকে মা মেরী ভর করেছিল।
তাদের ঝাড়-ফুঁকে অনেক সুস্থ্য হয়েছে। তাই তারা ফুলমনিকে চিকিৎসা করেছে। সেই
সময় তিনি গীর্জায় ছিলেন না।
অথচ ঘটনার দিন তিনি জানান, ‘ঘটনার সময় তিনি প্রার্থনারত অবস্থায় ছিলেন
তাই অন্যদিকে খেয়াল করেননি। আর গীর্জায় পানি পড়া, ঝাড়-ফুঁক দেয়া হয়। তবে
কাউকে শারিরীক নির্যাতন করা হয় না।’
এ দিকে ফুলমনি হত্যা ঘটনার আসামী মুন্ডুমালা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম
শ্রেণীর ছাত্রী বর্ষা মার্ডির মা লুইজিনা মার্ডি জানান, ‘হামার মিয়ে
নির্দুষ ছেলো বাবু। এটা একটা চুকান্ত ছাড়া কিছুই লয়। ক্যান সেদিন পিয়াসকে
ধরে পুলিশ ছেড়ে দিলো। আর হামার মেয়ে ছাড়া কি কেও তুখোন ওই গীর্জায় ছিলো না ?
কার গীর্জা চালায়, তাদেরকে পুলিশ তো ধরলো না। হামরা ন্যাজো বিচার চাই।’
এবিষয়ে তানোর থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনোয়ার হোসেন জানান, নিহত
ফুলমনির মেয়ে আরতী মার্ডিসহ তার আত্মীয় স্বজনের অভিযোগ পেয়েছি। ময়না
তদন্তের রির্পোট ও আমাদের তদন্ত সাপেক্ষে যদি ফাদারসহ অন্যান্যদের
সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় তবে তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
0 Comment "তানোরে আদিবাসী নারী হত্যার ৩দিন : গ্রেপ্তার হয়নি ফাদার মাইকেল "
Post a Comment