গির্জায় নির্যাতনে আদিবাসী বৃদ্ধার মৃত্যু, আটক ৬

আদিবাসী বৃদ্ধাকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ছয়জনকে (বারান্দায় বসা) গ্রেফতার করে পুলিশ


রাজশাহী  জেলার তানোরে ‘অশুভ শক্তি’ তাড়ানোর নামে এক আদিবাসী (ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠি) বৃদ্ধাকে তার দুই মেয়ের সামনেই লাঠি ও ঝাঁটা দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নিহত বৃদ্ধা চুনিয়াপাড়া গ্রামের মৃত ঝাদে মার্ডির স্ত্রী  ফুলমতি মার্ডি (৬০)। মঙ্গলবার গভীর রাতে তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা পৌর এলাকার সাধু জন মেরি ভিয়ানি গির্জায় এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় বুধবার সন্ধ্যায় ফুলমনির বড় মেয়ে শেফালী মার্ডি বাদী হয়ে তানোর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।


বৃদ্ধাকে হত্যার অভিযোগে গির্জার শিক্ষিকা বিলাসি (৩০), মি. রতন হাসদা (২৫), ছিয়াজ হেমব্রম (২৪), হিউব্রাক জেভি মার্ডি (২১), মিস বিলানী (৩৫), ফাল্গুনি মার্ডি (১২) ও বর্ষা মার্ডি (১২) গ্রেফতার করেছে। তাদের থানায় প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে আসছে বলে পুলিশের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে।

পুলিশের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সূত্রটি জানিয়েছে, এ ঘটনায় নিরাপরাধ কিশোর-কিশোরীদের ঘটনার ‘বলি’ বানানো হচ্ছে। ফুলমনিকে শারীরিকভাবে নির্যাতনের আদেশদাতা হলেন গির্জার ফাদার।

ফুলমনির দুই মেয়ে আরতি মার্ডি ও শেফালী মার্ডি জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে তাদের মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসা সম্পর্কে ধারণা না থাকায় তারা তাকে বাড়ির পার্শ্ববর্তী গির্জায় ঝাঁড়ফুক করানোর জন্য নিয়ে যান।

গির্জার ফাদার মাইকেল কোড়াইয়া এ সময় বলেন, ফুলমনির শরীরে ‘অশুভ শক্তি’ ভর করেছে। এরপর ওই গির্জার শিক্ষিকা বিলাসিকে নির্দেশ দেওয়া হয় ফুলমনির শরীর থেকে অশুভ শক্তি দুর করতে। শুরু হয় ঝাঁড়ফুকের নামে গভীর রাত পর্যন্ত শারীরিক নির্যাতন।

এ সময় বিলাসির সঙ্গে আরো পাঁচ কিশোর-কিশোরী রতন, ববি, ফাল্গুনী, বর্ষা ও সম্পা ঝাঁড়ফুক শুরু করেন। একপর্যায়ে তারা ছয় জন মিলে ফুলমনিকে মাটিতে ফেলে পা দিয়ে খোঁচাতে থাকেন এবং নিমের ঠাল ও ঝাঁটা দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন।

এ অবস্থায় ফুলমনির শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে আরতি তার মাকে হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য গির্জার ফাদারের কাছে অনুরোধ করেন। কিন্তু তার অনুরোধ রাখেননি ফাদার। তিনি চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। এরপর রাত আড়াইটার দিকে ফুলমনির মৃত্যু হয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে আদিবাসীদের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

ঘটনার পর আরতি পার্শ্ববর্তী মু-মালা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে অভিযোগ দিলে পুলিশ চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত ছয় জনকে আটক করে। তবে ঘটনার মুলহোতা গির্জার ফাদার মাইকেল কোড়াইয়াকে পুলিশ আটক না করায় এলাকাবাসির মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

এ বিষয়ে গীর্জার ফাদার মাইকেল কোডাইয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফুলমনিকে নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, এখানে শুধু অসুস্থ ব্যক্তিদের ঝাড়ফঁকু দেওয়া হয়। আর কোনকিছু করা হয় না। তবে এটা একটি দূর্ঘটনা বলে দাবি করেন তিনি।

তানোর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনোয়ার হোসেন জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে বৃদ্ধার শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত শিক্ষিকাসহ ছয় জনকে প্রথম আটক দেখানো হলেও পরবর্তীতে গ্রেফতার করা হয়েছে। থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে।

লাশ ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের  মর্গে পাঠানো হয়। তবে ঘটনার মূলহোতা গির্জার ফাদারকে গ্রেফতার বা তাকে কেন আসামি করা হয় নি- এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।

সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আব্দুর রশিদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ফাদার এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত কী না- তা তদন্ত করা  হচ্ছে। জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

0 Comment "গির্জায় নির্যাতনে আদিবাসী বৃদ্ধার মৃত্যু, আটক ৬"

Post a Comment