বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়েও ক্যাডার পদ পাননি এক মালো আদিবাসী

বিসিএস পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়েছেন। সাধারণ ক্যাডারের সাতটি পদও শূন্য ছিল। তবু ক্যাডার পদে চাকরি পাননি এক মালো আদিবাসী।

ঠাকুর দাস মালো নামের এই প্রার্থী বর্তমানে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপরিদর্শক। সরকারি কর্ম-কমিশনের (পিএসসি) দাবি, ওই প্রার্থী যথা সময়ে আদিবাসী হিসেবে আবেদন করেননি। পরে নন-ক্যাডার পদের জন্য সনদ দেওয়ায় তাঁকে ওই পদে চাকরির সুপারিশ করা হয়েছে।

তবে ঠাকুর দাস দাবি করেন, তিনি মৌখিক পরীক্ষার আগে আদিবাসী সনদ জমা দিয়েছেন। আর নন-ক্যাডার পদের জন্য তিনি আদিবাসী সনদের শুধু ফটোকপি দিয়েছিলেন। এ অবস্থায় ঠাকুর দাস তিন বছর ধরে পিএসসি, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও তথ্য কমিশনসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ন্যায়বিচারের দাবিতে ছুটছেন।

পিএসসি সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে ২০১০ সালের ৩ জুন ২৮তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়। এতে ৫ হাজার ১০৫ জন উত্তীর্ণ হন। তাঁদেরই একজন ঠাকুর দাস মালো। তবে পদস্বল্পতার কারণে ২ হাজার ১৯০ জনকে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। কিন্তু যোগ্য প্রার্থী না পাওয়ায় উপজাতি কোটার ১৪০টি পদ শূন্য থেকে যায়।

ঠাকুর দাস বলেন, ফল প্রকাশের পর ক্যাডার পদে তাঁর রোল নম্বর না দেখে ২০১০ সালের ১৩ জুন তিনি ফল পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন। ইতিমধ্যে পিএসসি নন-ক্যাডারের জন্য আবেদন চাইলে সেখানেও আবেদন করেন। ছয় মাস পর তাঁকে উপজাতি কোটায় নন-ক্যাডার পদ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ করে পিএসসি। কিন্তু তিনি ওই পদে যোগ দেননি।

ঠাকুর দাসের প্রথম পছন্দ ছিল পুলিশ। ওই বিসিএসে মেধায় ৯০ জন এবং কোটায় ৯৯ জনকে পুলিশে নিয়োগ দেওয়া হয়। বিসিএসে আদিবাসী কোটা ৫ শতাংশ। সেই হিসাবে পুলিশে আদিবাসীদের জন্য পাঁচটি পদ সংরক্ষিত ছিল। নিয়োগ দেওয়া হয় তিনজনকে। প্রার্থী নেই বলে বাকি দুটি পদ খালি রাখা হয়। একইভাবে প্রশাসনে দুটি এবং তথ্য, কর ও শুল্ক ক্যাডারে একটি করে আদিবাসী কোটার পদ শূন্য ছিল। কিন্তু ঠাকুর দাসকে কোনো পদে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

পদ শূন্য থাকার পরও নিয়োগ না দেওয়ায় গত বছরের ২১ জুলাই ঠাকুর দাস ক্যাডার পদ চেয়ে পিএসসিতে আবেদন করেন। কোনো জবাব না পেয়ে ২৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আবেদন করেন। বিষয়টি আমলে নিয়ে ২০ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তাঁকে চিঠি দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করতে বলা হয়। ওই দিনই তিনি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। কিন্তু এখনো পিএসসি তাঁকে কিছু জানায়নি।

ঠাকুর দাস শীর্ষ নিউজ বলেন, ‘চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও নিয়োগ না দিয়ে আমার সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার ক্ষুণœ করা হয়েছে।’

ঠাকুর দাস কেন ক্যাডার পদ পাননি জানতে চাইলে পিএসসির কোনো কর্মকর্তা নাম প্রকাশ করে বক্তব্য বা মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে পিএসসি সচিবালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ২০১৪ সালের ২৭ নভেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি জানানো হয়েছে। কী জানানো হয়েছে, জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, ২৮তম বিসিএসের ফরমের ৬ নম্বর অনুচ্ছেদে ঠাকুর দাস নিজেকে আদিবাসী হিসেবে উল্লেখ করেননি। কাজেই তাঁকে আদিবাসী হিসেবে ধরা হয়নি। তবে চূড়ান্ত ফল দেওয়ার পর ২০১০ সালের ২০ জুন তিনি আদিবাসী হিসেবে নন-ক্যাডারে আবেদন করেন। এর ভিত্তিতে তাঁকে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা পদে সুপারিশ করা হয়। এর ভিত্তিতে তিনি ক্যাডার পদ পাবেন না।

পিএসসির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঠাকুর দাস বলেন, ‘সারদা পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময় আমি জানতে পারি সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী মালোরা আদিবাসী। এরপর ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে আমি সনদ নিই। বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সেই সনদ জমা দিতে পিএসসিতে গেলে আমাকে বলা হয়, লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে মৌখিক পরীক্ষার আগে সনদ দিলেই চলবে। আমি লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যথারীতি পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তরে যাই। তাঁর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম আমার আদিবাসী সনদ গ্রহণ করেন। কিন্তু এখন পিএসসি বলছে, আমি ফল প্রকাশের আগে সনদ দিইনি।’

আমিনুল ইসলাম বর্তমানে পিএসসির সহকারী পরিচালক। ঠাকুর দাসের বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি শীর্ষ নিউজকে বলেন, ‘ওই প্রার্থী যদি আমার কাছে দিয়ে থাকে, তাহলে সেটি সংশ্লিষ্ট শাখায় পাঠানো হয়েছে। এর বেশি আমি কিছু বলতে পারব না।’

আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, মালো সম্প্রদায় খুব পিছিয়ে পড়া আদিবাসী। সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংকে খুঁজলে এই সম্প্রদায়ের কাউকে পাওয়া যাবে না। সেই সম্প্রদায়ের একজন যদি বিসিএসে চূড়ান্ত ভাবে উত্তীর্ণ হন, সেটাই একটা বড় খবর। এখন এভাবে তাঁর নিয়োগ না পাওয়া তো আরও বড় ঘটনা। তিনি বলেন, ‘আমি পিএসসি ও সরকারকে বিষয়টি মানবিকভাবে বিবেচনার অনুরোধ করব।’

0 Comment "বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়েও ক্যাডার পদ পাননি এক মালো আদিবাসী"

Post a Comment