ভালুকায় আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধার ভাতার আর্তি

বীরেন সাংমা
  যৌবনে  মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন বাজি রেখে দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য যুদ্ধ করেছেন। আজ বার্ধক্যে এসে সেই বীর জীবনযুদ্ধে পরাজিত। দেশের সব মুক্তিযোদ্ধারা সম্মানী ভাতা পেলেও এই বীরের ভাগ্যে তা জোটেনি। এখন অনাহারে অর্ধাহারে পরিবার পরিজন নিয়ে তিনি ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছেন। ‘৭১র এই বীর সেনানী হচ্ছেন উপজেলার মল্লিকবাড়ী ইউনিয়নের  মল্লিকবাড়ী গ্রামের আদিবাসী (৬৭)। নাম এবং বীরত্ব একাকার হলেও এখন তিনি পরের দয়ার কৃপাপ্রার্থী। আর্থিক দুরাবস্থায় পড়ে অসুস্থ্য এবং পঙ্গু হয়ে মানবেতর জীবন ঠেলছেন।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘যৌবনে  যুদ্ধকরে স্বাধীন দেশ পাইছিলাম  বুড়ো বয়সে পা ভাইঙ্গা পঙ্গু অইছি, মুক্তিযোদ্ধা ভাতার জন্য আবেদন কইরাও পাইলাম না খালি কয় পাইবেন পাইবেন’

পাবার জন্য আর কত অপেক্ষা? মরনের পর পাইলে তো আমার কোন কাজে আইবোনা। তার প্রশ্ন, তিনি এ জীবনে ভাতা পাবেন কী ? শতেক কষ্ট আর হতাশা মনে নিয়ে এমনিভাবে নিজের অসহায়ত্বের বয়ান দিলেন সেদিনের বীর মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধা বীরেন সাংমার বাবার নাম মূত সুরেন্দ্র মারাক,তার মুক্তিযোদ্ধা সনদ নং ১৭৮৭১৯ ।

১নং সেক্টর ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার কর্ণেল তাহেরর অধীনে ১৯৭১সনের মহান মুক্তিযোদ্ধে অংশ নেন বীরেন । কূষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাজমুল হক ছিলেন তাদের গ্রুপ কমান্ডার। শেরপুর ব্রিজ অপারেশনে এসে পাক বাহিনীর সাথে যুদ্ধে কমান্ডার নাজমুল শহীদ হন । পরে ডাক্তার উইলিয়াম মুডং তাদের কমান্ডার নিযুক্ত হন । দেশ স্বাধীন হবার পর ভালুকার মল্লিকবাড়ী গ্রামে রিচু সাংমার মেয়ে প্রেমলা মারাককে বিয়ে করেন।

উপজাতি রীতি অনুযায়ী মল্লিকবাড়ীতেই তিনি ঘর জামাই হয়ে যান ।তারপর থেকেই তিনি ভালুকার স্থায়ী নাগরিক হয়ে উপজাতি জনগোষ্ঠির উন্নয়নে নিজে দ্বিতীয় যুদ্ধে জড়িয়ে যান। একনাগাড়ে তিনি ১৯ বছর উপজেলা ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন । অনগ্রসর উপজাতি ছেলে মেয়েদের লেখা পড়ার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,চিকিৎসার জন্য মিশন হাসপাতাল স্থাপনে তিনি বড় ভূমিকা রাখেন।

তিন ছেলে এক মেয়ে ও স্ত্রী প্রেমলা সহ তাদের সংসার এক সময় ভালই ছিল । উপজাতি রীতি অনুযায়ী ছেলেরা বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ী চলে যায়। ব্যাতিক্রম হয়নি বিরেন সাংমার ছেলেদের বেলাতেও। এক মেয়ে সেও স্বামীর সাথে বসবাস করেছেন তার বাড়িতে।  শুধু স্বামী-স্ত্রী বূদ্ধ বয়সে দুর্বিসহ জীবন যাপন করছেন ।
বাড়ী সহ সামান্য জমির মালিক তারা । আয় রোজগারের কোন পথ না থাকায় বর্তমানে অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটছে । দুর্ঘটনায় একটি পা ভেঙ্গে যাওয়ায় চিকিৎসার অভাবে এখনও ঠিকমত চলাচল করতে পারেন না। পায়ের চিকিৎসায় ডাক্তার বদ্যি লাগে কিন্তু টাকার অভাবে তা করা সম্ভব হচ্ছে না। 

প্রায় ১ বছর পূর্বে ৭ নং মল্লিকবাড়ী ইউনিয়ন কমান্ডার আশরাফ আলীর মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা ভাতার জন্য আবেদন করেন । এর পর আশরাফ আলী তাকে ভাতা হবে হচ্ছে বলেই ১ বছর ধরে কেবলই আশ্বাস দিচ্ছেন। 

একজন অসহায় পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে বর্তমান সরকারের মুক্তিযোদ্ধা পূর্ণবাসনের অংশ হিসাবে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পেতে সরকারের কাছে তিনি আকুল আবেদন জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে ভালুকা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোঃ মফিজুর রহমানের কাছে মোবাইল করলে  তিনি অফিসের কাজে ব্যস্ত আছেন পরে অফিসে এসে যোগাযোগ করতে বলেন । ভালুকা উপজেলা সমাজকল্যাণ অফিসার (অঃ দাঃ) আঃ বাতেন বলেন ,আপাতত আমাদের বাজেট নেই প্রাপ্তি সাপেক্ষে অতি দ্রুতই তার ভাতার ব্যবস্থা করা হবে বলে তিনি জানালেন।

0 Comment " ভালুকায় আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধার ভাতার আর্তি "

Post a Comment