সুন্দরপুর আদিবাসী গণপাঠশালার শিক্ষকরা বেতনহীন ৩ বছর

DSC00666 স্কুল আছে, ছাত্র আছে এবং অবকাঠামোগত মোটামুটি সুবিধা থাকলেও শিক্ষকদের ৩ বছর ধরে বেতন-ভাতা নেই। কর্মরত শিক্ষকরা এই স্কুলে চাকরি নিয়ে হতাশাগ্রস্থ। বেতনহীন অবস্থায় বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করায় তারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার কাঁকনহাট পৌরসভার আদিবাসী স্কুল সুন্দরপুর গণপাঠশালার চিত্র এটি।

আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকার এলাকার পিছিয়ে পড়া আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নেয়ার জন্যই সুন্দরপুর যুক্তিপাড়ায় বেসরকারিভাবে ২০০২ সালে বেসরকারি সংস্থা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সহযোগীতায় এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। নাম দেওয়া হয় সুন্দরপুর গণপাঠশালা ।
২০০২ সালের ১৬ আগষ্ট ৫৭ জন শিক্ষার্থী নিয়ে বিদ্যালয়ের বাঁশের বেড়া ও টিনের ছাউনি বিশিষ্ট তিনটি কক্ষে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়।
সুন্দরপুর গণপাঠশালায় বর্তমানে ২১১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫১ জন মুসলিম শিক্ষার্থী রয়েছে। ২০১২ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় ২১জন অংশগ্রহণ করে শতভাগ উত্তীর্ণ হয়। এ পাঠশালার সাবেক শিক্ষার্থী শ্যামসান টুডু বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে পড়াশোনা করছে। এছাড়া আরও ৩০ জন সাবেক শিক্ষার্থী বিভিন্ন কলেজে অধ্যয়নরত। ধীরে-ধীরে এই পাঠশালাটির শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধি পেলেও উপকরণ সংকটের কারণে শিশুদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। এই বিদ্যালয়টি এখন সরকারী ও বেসরকারী সংস্থায় সহযোগীতা থেকে অনেকটা বঞ্চিত প্রধান শিক্ষক লুচিয়ান্না সরেন বলেন, স্কুলটিতে পার্শবর্ত্তী গ্রাম জয়কৃষ্ণপুর, পাঁচগাছিয়া, শ্রীরামপুর, যুক্তিপাড়া ও সুন্দরপুর এই পাঁচটি গ্রামের ছেলেমেয়েরা পড়াশুনা করে থাকে।
শিক্ষকদের বেতন না থাকায় নানান প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে সুন্দরপুর আদিবাসী গণপাঠশালার শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। পাঠশালাটি প্রতিষ্ঠার প্রায় ১৩ বছর পরও সরকারিভাবে এর কোনো উন্নয়ন হয়নি। পাঠশালাটির নিয়মিত পাঠদান চলছে বিদ্যুৎবিহিন অবস্থায়। শিক্ষকরা নিজ উদ্যোগে আদিবাসী ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে পাঠদান অব্যাহত রেখেছেন।
প্রধান শিক্ষক লুচিয়ান্না সরেন জানান, ২০০২ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়ে নানা প্রতিকুলতার মধ্য দিয়ে এপর্যন্ত চলে এসেছে। বিগত ২০১২ সাল পর্যন্ত গণস্বাস্থ কেন্দ্র স্কুলটি পরিচালনা করেন কিন্তু ২০১৩ সাল থেকে আমরা পাঁচজন শিক্ষিকা কোন বেতনভাতা পাইনি। বর্তমানে স্কুলটিতে ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা ২১১ জন। এতোগুলো ছাত্র ছাত্রীর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আমরা এ পর্যন্ত স্কুলটিকে টিকিয়ে রেখেছি। এমতাবস্থায় আমরা সরকারের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
হেমন্ত চন্দ্র মাহাতো, রাজশাহী

0 Comment "সুন্দরপুর আদিবাসী গণপাঠশালার শিক্ষকরা বেতনহীন ৩ বছর"

Post a Comment