মাটিরাঙ্গায় আদিবাসী পল্লিতে হামলা
চুক্তি বাস্তবায়নই পাহাড়ে শান্তি আনতে পারে
পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বঞ্চনার অবসান ঘটাতে ১৯৯৭ সালে যে
চুক্তি সই হয়েছিল, ১৬ বছর পরও তা বাস্তবায়িত না হওয়ায় সেখানে নতুন নতুন
সমস্যা তৈরি হচ্ছে। ফলে আদিবাসীদের মধ্যে যেমন ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে,
তেমনি সেখানে বসবাসরত বাঙালিদের সঙ্গে তাদের সম্পর্কেরও অবনতি ঘটেছে। গত
শনিবার খাগড়াছড়ি উপজেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার তাইন্দং ইউনিয়নে এক
মোটরসাইকেল চালকের অপহরণকে কেন্দ্র করে আদিবাসীদের ঘরবাড়ি লুট ও
অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে, যা কেবল অনাকাঙ্ক্ষিত নয়, নিন্দনীয়ও। আক্রান্ত
হওয়ার ভয়ে আগে থেকে আদিবাসীরা ঘরবাড়ি ছেড়ে সীমান্ত এলাকায় আশ্রয়
নেওয়ায় কেউ হতাহত হয়নি। কিন্তু দুর্বৃত্তরা তাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে
দিয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদে ইউপিডিএফ খাগড়াছড়ি জেলায় আজ সোমবার সড়ক ও
নৌপথ অবরোধের কর্মসূচি দিয়েছে।
এখন প্রশাসনের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে
আদিবাসী গ্রামে হামলাকারীদের খুঁজে বের করে বিচারে সোপর্দ করা। একই সঙ্গে
এলাকা ছেড়ে যাওয়া আদিবাসীদের ফিরিয়ে এনে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
আদিবাসীদের নিরাপত্তায় প্রয়োজনে সেখানে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন
করতে হবে।
এদিকে শনিবার আদিবাসী দিবসে আয়োজিত সেমিনারে পাহাড়ি ও
বাঙালি নেতারা চুক্তি বাস্তবায়নের ওপর সবিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। ১৯৯৭
সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারই চুক্তি করেছিল, এখনো তারা
ক্ষমতায় আছে। অতএব, চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার দায় অন্যের ওপর চাপানোর
সুযোগ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, তারা চুক্তি বাস্তবায়নে অনেক
কিছুই করেছে। কিন্তু আদিবাসীদের মূল সমস্যা ভূমি বিরোধের নিষ্পত্তি এবং
বাঙালি অভিবাসন-প্রক্রিয়া বন্ধ হয়নি। ভূমি কমিশন গঠন করলেও এখনো এর
কার্যপরিধি ঠিক করতে পারেনি। এটি কোনোভাবেই চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের
আন্তরিকতা প্রমাণ করে না।
জনসংহতি সমিতির নেতা জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয়
(সন্তু) লারমা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়াকে
আদিবাসীদের সঙ্গে রাষ্ট্রের বিশ্বাসঘাতকতা বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর এই
অভিযোগ গুরুতর। পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা এবং সেখানে
বসবাসরত বাঙালি ও আদিবাসীদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য চুক্তি বাস্তবায়নের
বিকল্প নেই।
0 Comment "মাটিরাঙ্গায় আদিবাসী পল্লিতে হামলা"
Post a Comment